অশোক দেব
ঝাঁপ
এক।।
ঝাঁপ
এক।।
তুই জানস না ভানু তুই কেডা
চৈত্রের বাতাস বিভিন্ন পাড়াতে বিভিন্ন।
এমনকি এক বাড়িতে এ হাওয়ার রূপনমুনা আরেক বাড়িতে মেলে না। সদানন্দ তার ভেদ জানে। যে
বাড়িতে গন্ধে বোঝা যায় এই হাওয়া চৈত্রের, সে বাড়িতে সদা বেশি দরদী, তাল কাটে না, সুরও
নষ্ট হয় না। মনে হয়, স্বয়ং ভোলানাথ তার শরীরে, মনে, তার কণ্ঠে এসে ভর করেন।
আর তুই ভানু, আমার গৌরী হইয়াও তেমাথায়
বিড়ি ধরাইলি?
সদানন্দ ভানুর পরিচয় জানে। জগৎ জানে ভানুমিস্ত্রি।
ভানুলাল সূত্রধর। সদা জানে গৌরী। সদা গায়ক। ছোটবেলা হঠাৎ তার মাথায় জটা দেখা দেয়, সামান্য
টিকির মত। আর তেরো বছর সদানন্দ গাজন দলের শিব। বহুবার দল ভেঙেছে, গড়েছে। সদাই আবার
টেনে আনে সবাইকে। ভানু পাঁচ বছর গৌরী সাজে। বাকি সময় মিস্ত্রিগিরি। ছূতার। আর এইখানে
সদার আপত্তি। দেবদেবীর কাণ্ড তুই ধরাধামে দেখাইবি, আর পেডের লাইগ্যা রান্দা ঠেলবি?
কাঠকোয়ারি ঘর বানাইবি? সারা বছর কামড় দিয়া পইর্যা থাহন লাগে। নইলে দেবদেবী ছাইরা যায়,
কে শোনে কার কথা!
ভানু, বিড়ি খাইস না
—
চুপ কর, বিড়ি খাইস না,
গলা চির্যা চিল্লাই, তিন বাড়ি গাইয়া একটা বিড়ি খামু না? নিজে তো খুব কল্কি মারো।
এই ঝামটা শুনে বড়ো আহ্লাদ হয় সদানন্দের। কৈলাসের
বেডিও শিবঠাকুররে ধমকায়, বুইড়্যা, ধামসা বেডা। তবু তো বুঝবি তুই, গোরী সাইজ্যা বিড়ি
তোরে মানায় না। সদানন্দ জানে গৌরী সাজার পর ভানু আর ভানু থাকে না। তার হাঁটা, তার কটাক্ষ,
পায়ের পাতা, নাকের ডগায় মিহি ঘাম, এমনকি তার নকল বুকজোড়ায় যে লাবণ্য স্থাপিত হয়, তা স্বর্গীয় না হয়ে যায় না। আর
ভানু কিনা চ্যাংড়া পোলাপানের তালে নাচে, তারা তার কৃত্রিম বুকজোড়া টিপে দেয়। বিনিময়ে
ভানু তাদের থেকে বিড়ি চেয়ে খায়। পিত্ত জ্বলে যায় সদানন্দের। দক্ষযজ্ঞের পার্ট দেখানোর সময় সতীর বিরহে
সদার বুকে যে আগুন জ্বলে ওঠে, সে কি মিছা কতা?
ভোর হয়ে যায় ঘুরে ঘুরে। এখন আর বাড়ি বাড়ি গাজনের সেই রমরমা নেই। দলও
তেমন মজবুত নেই আর। কেউ গ্রিল ফ্যাক্টরিতে কাজ করে, কেউ মিষ্টি দোকানের কারিগর, কারও
বাঁশের কারবার। কারও কাছে টাইম নাই। সেই উৎসাহ নাই। তিন চার বাড়ি পর পরই বসতে হয়, জিরোতে
হয়।
গাজন গেয়ে বাড়িতে ফিরে সদা ঘরে ঢোকে না।
বাপ ঠাকুর্দার রাজ আমলের বাড়ি। অর্ধেক গোমতীর গর্ভে গিয়েছে। তবু, সদা জানে গোমতী তাকে
সমীহ করে খুব। মুখের রংচং ধুয়ে যখন এইখানে মাটিতে ত্রিশূল গেঁথে বসে, গোমতী ঘেঁষতে
চায় তার কাছে। নদীর এই বেহায়াপনার জন্যই গাঙপাড়ের ছেলে, সদানন্দের সাঁতার শেখা হল না।
একটু সিদ্ধি বানিয়ে খায়। ধ্যানে বসে। নিজের জটা ছোট, তাই পার্ট করার সময় আলগা লাগাতে
হয়। কুটকুট কর। সদা জানে, একবার
ধ্যান লেগে গেলে এসব পাতলা হয়ে যায়।
একটি ধবল বৃষ, তার সুবর্ণ শিং। ধবল পর্বত
কৈলাস। এক ধবল আলো চারিদিকে। আর মিহি চৈত্রের হাওয়া, জটায় গঙ্গার কুলুকুলু। দেবাদিদেব
ধ্যানস্থ। দেবী গৌরী, ধবল তাঁর অঙ্গবর্ণ, তাঁর কণ্ঠ মধুক্ষরা, পায়ে ধুতুরার ফুল নিবেদন
করেন স্বামীর।
হে ত্রিকালজ্ঞ, শূলপাণি, প্রভু
চোখ খুলে তাকালেন মহাদেব। দেবী বামা প্রণতা।
তঁর দেহসৌষ্ঠব ভানু, তার লতাভুজ ভানু, তার চক্ষুজোড়া
ভানু। ভানু। ভানু। ভানু।
ধ্যান টুটে যায় সদানন্দের। সূর্য উঠেছে। তার আলো গোমতীর শরীরে, ঢেউয়ে ঢেউয়ে
এক অলৌকিক বিশ্বাস স্থাপন করে। কাজে
যাওয়া মানুষ স্নান সারছে। ভানুও
এসেছে। ঘাটে বসে দাঁত মাজে, সদাকে দেখেছে, পাত্তা দেয় না। না দিক। এই তো তাকে মানায়।
দুই।।
সদানন্দ স্নান করে না। এখন ঘরে
গিয়ে ঘুমবে। তার এক বছরের
নতুন বউ। সদা গা করে না। এ মাস তার স্বপাক। হবিষ্যি। নতুন বেত তোলা, বাণপাট বানানো, ব্রাহ্মণ এনে আত্মশুদ্ধি, শরীর শুদ্ধি
করতে হয়। সদা বিয়েই করতো না, রামুদার ধমকে, জোর করে করিয়েছে। রামুদা না থাকলে এই গাজনের
দলের খরচাপাতি, সাজপোশাক, সারা বছরের কীর্তনের বায়না, টাউন হল মাঠে গাজন প্রতিযোগিতায়
যাওয়া, কিছুই হবে না। রামুদার ভাঙাচোরার কারবার। প্রচুর পোলাপান তার হয়ে ভাঙাচুরা কুড়িয়ে
আনে। প্লাস্টিকের জিনিস, কাচের বোতল, পুরনো লোহা, পৃথিবীর যাবতীয় ভাঙা জিনিস নিয়ে তার
কারবার। এইগুলো আলাদা আলাদা করে বেছে তারপর আরও ভেঙে টুকরো টুকরো করে বিক্রি হয়। কে
যে কেনে! এই করেই রামুদার স্কুটার হয়েছে, শোনা যায় গাড়িও হবে। গতবার থেকে বাড়িতে এক কাঠামের দুর্গপূজাও চালু হয়েছে। সদা জানে রামুদার ল্যাংডা পোলাপান টুকটাক চুরিও করে।
শুধু একটা কষ্ট, রামুদার বউয়ের বাত। সারা বছর বিছানায় পড়ে ক্যাগলায়। অবাক লাগে, বৌদি গোদা পায়ে নপুর বাইন্ধ্যা রাখে।
সদা দেখেছে, হেসেছে। পাজামা পাঞ্জাবি
বাবরি, বাঁকা চুল, পঞ্চায়েত মেম্বার রামুদা। তার কথা ফেলতে পারেনি সদা। শেষ পর্যন্ত
রাজি হয়েছিল বিয়েতে। শুধু জটা কাটতে রাজি হয়নি। পরে, শুধু বিয়ের জন্য পরচুলা কিনে দিয়েছিলো
রামুদা। হালার পরচুলা, খুলে ফেলেছে সদা বিয়ের রাতেই, পাশা খেলার পরে ঘরে গিয়ে। সেই
রাতেই নামতে হয়েছে মেঝের আশ্রয়ে, নতুন পাটি পেতে নীচে শুতে হয়েছে তাকে। মহারানির ঘিন্না
করে জটা। তবু ভাতটা ডালটা তো পাওয়া যাচ্ছে। সদা সুখী।
ঘুম থেকে উঠেই সদানন্দ গান ভাঁজে। কোনও
বাপের পুত নাই এই সময় সদাকে দিয়ে কোনও কাজ করায়।
শিব বলে ওগো গৌরী
রাগ কইরো না
এবার তোরে বাপের বাড়ি
দিয়ো আমু গিয়া
সুর লাগাতে চেষ্টা করে সদা।
—
শুনছো?
এই এক জ্বালা। সদা খেঁকিয়ে ওঠে, কিতা, কিতা হইছে?
—
এট্টু তেল লাগবো।
—
ক্যান রামুদা দিছে না?
—
রামুদা আর কত দিবো?
—
দিবো না ক্যান?
সদা উঠে যায়। ঘোরের মধ্যেই জোরে হাঁটে
সে। রামুদার নাম করে তেল এনে দেয়। দোকানের নিত্য সাহা ঠেস মারে, ‘ভোম ভোলা, ভোলানাথ,
রামুদা কেডা? তোমার ব্রহ্মা না প্রজাপতি?’ সদানন্দ চোখ বড় করে তাকায়। গাঁজালাল চোখ
তার। নিত্য সাহা চুপ। ঘরের দাওয়ায় তেলের শিশি রেখেই আবার বেল গাছটার নীচে এসে বসে সদানন্দ। গানটা ফেরাতে চায়। বেঁধে, সুর করে বারবার গেয়ে মুখস্ত
না করলে গান মনে থাকে না। সদা নিরক্ষর। বউয়ের ভাষাও বোঝে না। তেল ঘরেই ছিল। রান্নার
শব্দ আসছে। বউটা হাসছে খুব। সদা আবার বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে। মাইয়া মাইনসের এতো গাও
ঘেঁষামি ভাল্লাগে না।
অমূল্যদার চায়ের দোকান। বাইরের বেঞ্চিতে
বসে সদা। এক কাপ বরাদ্দ হলেও হতে পারে। এই এক বস্তু। সদা বড়ই কাবু এই চায়ের কাছে। উপবাস ভেঙে ফেলে। ওপাশে ভানুর কাঠমিস্ত্রির
দোকান। রান্দা করছে। সদা নিষ্পলক চেয়ে দেখে। ভানুর ফর্সা গায়ের রং। মুখে একটা অন্য
শ্রী। শরীরে রোম কম। রামুদা এই জন্যেই গৌরীর পার্টে বেছেছে। কিন্তু সদা জানে মহাজগতে
সব তাঁর লীলা। এই যে ভানুকে দেখছে আর তার শিহরণ জাগছে, এ তো তার নয়, তার শিব শরীরের।
ছোটবেলা থেকেই ধ্যানের ধাত সদার। বাড়ির পেছনে, যেটা এখন গোমতী নিয়েছে, সেখানে তার ধ্যানের
জায়গা ছিল। সমবয়সী কিছু পুংডা পোলাপানও আসতো। তারা সেখানে লুকিয়ে মাইয়ালোকের স্নান দেখতো গোমতীতে। সদা তাড়াতে গেলেই বলতো,
একলা খাবি, শালা?
না, সদা জানে ধ্যানে যে আরাম তা অন্য কিছুতে
নাই। শরীরের স্বাদ নাই তার।
কিন্তু এই ভানুর কাছে এসে তার সবকিছু গোলমাল হয়ে যায়। এ নির্ঘাৎ তার ভৈরবীর লীলা। চা
আর হল না সদার। অমূল্যদা আজ তাকালোও না।
সদা উঠে চলে আসে। বাটালে শান দিচ্ছে ভানু।
সদা ভীষণ ভয় পায়। একটু একটা পাথরের এক কোণে পায়ের বুড়ো আঙ্গুল চেপে বাটাল ঘষে ভানু।
সদা কেবল তাকিয়ে থাকে। এ চোখের মায়া ভানু বাটালকে কীভাবে দেয়! তার গলার কাছে তিল। চিকচিক
ঘাম, শ্বাসও স্পষ্ট।
—
কিতা?
সদা চুপ
—
আরে কিতা, কিল্লাইগ্যা আইছো? সিদ্ধির পইসা নাই? নতুন গান
বানছো?
—
না
—
তাইলে কী?
—
ভানু, তুই ইতান কাম ছাইড়্যা দে
—
হুন, তোমার মত গা-ও ছালি মাইখ্যা কি খামুও ছালি? অহন মানুষ
কীর্তন হুনে না। গাজন দেহে না। টিভি দেহে। তোমার মাথার ঘিলু নাই। চলব। আমার চলত না,
যাও।
—
ভানু
ভানু কথা বলে না। সদা তার হাত ধরে
—
বেইট্যামি কইরো না। তুমি ক্যামনে জানি গাও হাত দেও, ব্যাপারটা
কী?
—
আমি আজগা তোরে সাজামু ভানু। আজগা জাগাত বাইন্ধ্যা গান গামু।
আজগা পূর্ণিমা। শুভদিন।
—
অইছে, বুজ্জি, যাও।
তিন।।
আজ পূর্ণিমা। সদা সেজেছে। বাড়ির এক চিলতে উঠোন। সেখান থেকে পুবদিগন্তে ধোপাইছড়ি ব্রিজ।
নীচে বয়ে চলেছে গোমতী। ব্রিজের ঠিক নীচে এই চৈত্রেও প্রচুর জল। গভীর ঘূর্ণি। আরও পুবদিকে
পূর্ণচাঁদ রাজ্যের হাহাকার নিয়ে জেগে উঠেছে। সদানন্দ সেদিকে তাকিয়ে থাকে। বউ হাঁস ধরে
আনছে গোমতীর পাড় থেকে। সদা দেখে। এই মেয়েমানুষের শরীরে গান নাই, তাল নাই,সুর নাই। হাঁসের
গলায় ধরে যেভাবে আনছে, জ্যোৎস্নায়, কাঁঠালের ছায়ায়
মনে হয় রাক্ষুসী। তবু যেতে চেয়েছে, হতে চেয়েছে পুরুষ। তার নারীর নাকে বড়ো মাছের গন্ধ
লাগে। আঁশটে জটার কথা মনে আসে। আরে অমি কেডা তুই কী বুঝবি? হুদ্দাহুদ্দি মানুষের জডা
হয় না। ধ্যানে কৈলাস যায় না আল্টুপাল্টু মানুষ। ভৈরব। ভৈরব আমি।
একে একে জমা হয় সবাই। আজ রামুদা এসেছে।
আসে মাঝে মাঝে। ল্যাংড়া সুবল এসেছে কাঁসা আর করতাল নিয়ে। আজকাল মানুষ কিছু না হোক একটা
ঢেউটিনের গেট লাগায় বাড়িতে। তাদের অবশ্য সবারই গোপন কায়দা থাকে বাইরে থেকে খোলার।
ল্যাংড়া সুবল সারা বছর ভিক্ষা করতে গিয়ে সেসব রপ্ত করে। গাজনের সময় সে ভিক্ষা করে না।
ঢুলি স্বপন বাংলা মেরে এসেছে। এখন আবার এসব পলিপ্যাকে পাওয়া যায়। স্বপন এক প্যাকেট
সঙ্গেও নিয়ে নেয়। ইন্দ্র
আসে হারমোনিয়াম নিয়ে। সে ধুয়াও ধরে। আসে না ভানু। সদা আর বসে থাকতে পারে না। একে একে
সকলকে জিগ্যেস করে। তারপর গুম মেরে বসে থাকে। রামুদা চেয়ারে বসে আছে, ‘আর ইতান কইরা
লাভ নাই, মানুষ পাল্টাইয়া যাইতাছে। সদা, অহন অন্য কিছু করতে অইবো। আমার ইহানো লাইগ্যা
যা।’
সদা মনে মনে অন্যত্র। হে মহাদেব, শিবশম্ভু,
আমার ভানু কই? আমার গৌরী, ভৈরবী কই মহাদেব? আমি আজগা নিজের হাতে আলতা পরামু তারে। আইন্যা
দেও ঠাকুর, ভানু জানে না হে কেডা।
এমন সময় গুনগুন গান শোনা যায়। সদা দৌড়ে
যায় ভানুর সামনে। গিয়েই চুপ। ভানু সেজেই এসেছে। সদার মাথায় আকাশ। তার মনের বিচিত্র গতি নিজেই বোঝে না। হে মহাদেব,
তুমি একটু বোঝাও না ক্যান ভানুডারে? সে তো ভানু নয়।
সদানন্দ ঘোর হারিয়ে ফেলে। তবু আজ বেরোতে হবে। রামুদা কথা দিয়ে এসেছে হরিপদ সাহার বাড়িতে।
সবাই বেরিয়ে যায়, বাণপাট মাথায় নিয়ে অনাথ হরিও বেরিয়ে গেছে। হ্যাজাক
নিয়ে আগেই রাস্তায় গেছে মধু। সদানন্দ পায়ে ঘুঙুর পরে। ঠাকুরপ্রণাম করে, বেলগাছ প্রণাম
করে, বেরিয়ে পড়ে। সবার পেছনে।
হরিপদ সাহার বাড়ির উঠোন বিশাল। প্রচুর
লাইট। উঠোন ঘিরে চারদিকে ঘর। বারান্দায় সবাই বসা। সদা গণেশবন্দনা করে, শিবভক্তি করে,
দশদিক বন্দনা করে, তারপর গান ধরে। আজ সব দুঃখের গান আসে তার।
বাইদ্যানি, বাইদ্যানি ... কে যেন ফরমায়েশ
করে। এইসব পাতলা গান সদা গাইতে চায় না। তবু মাঝে মাঝে গায়। দলের উটকো লোকেরা নাচন কোঁদন করে। তবে তার বিশ্রামের জন্যই এসব গান
গায় ঢুলি স্বপন।
বাইদ্যানি তুই কেমন জাত
কিলের চোডে দেখবি জগন্নাথ
তোরে রাইনতে কইসি বাগুন ভাজা
রাইন্ধ্যা রাখসত হুদা ভাত
কিলের চোডে দেখবি জগন্নাথ ...
সদা বাইরে চলে আসে। বাড়ির সামনে একটা কৃষ্ণচূড়া
গাছ। তার ফাঁকে ফাঁকে জ্যোৎস্না। অনেকক্ষণ দেখা
নাই ভানুর। সদার বুকে যে কী হয়েছে! ওই তো, ঘাসের উপর বসে আছে গৌরী। সামনে পা ছড়ানো। পেছনে হাত রেখে পিঠ সোজা করে নিচ্ছে
ভানু। মুখ ওপরের দিকে তুলে যেন জ্যোৎস্না পান করছে। তার
মুকুটে চিকচিক করছে চাঁদের আলো। এলানো তার ভঙ্গি। তাঁর স্তনযুগলে নিশ্চিত আহ্বান। তিনি আজ ভৈরবী। শিব জ্বলন্ত অনল হয়ে ওঠেন। তাঁর সৃষ্টির
বাসনা জেগে উঠেছে যেন। সতীকে আচমকাই জড়িয়ে ধরলেন ভৈরব। এই তাঁর সাধনভৈরবী। দেবী সিদ্ধি
দাও। কৈলাসপতিকে শান্ত কর। সৃষ্টি রক্ষা কর ভগবতী। দেবীর ওষ্ঠাধারে চুম্বন করলেন মহাদেব।
ভীম আকর্ষণে নিজের দেহের ভিতরে নিয়ে আসতে চান।
—
শালা শূয়োরের ছাও, কুত্তার বাচ্চা ... ছিটকে পড়ে যায় সদানন্দ
—
ভণ্ডচোদা, ঘরে বউ রাইখ্যা শালার খাঁই মিডে না?
লাথি মারে ভানু, জামা খুলে গেছে তার। পড়ে
গেছে বানানো স্তন। প্রকাশিত পুরুষের দর্প। সদাকে আবার মারতে আসে। নাক বরাবর ঘুঁষি চালায়
সে।
সদার দৃষ্টি অন্ধকার। চরাচরেও এক হিম অন্ধকার।
ছুটতে থাকে সদা। বাড়ির দাওয়ায় এসে যায় কখন, কোনও খেয়াল নেই। মাংস রান্না হচ্ছে ঘরে।
গন্ধে ম ম। রামুদা আছে এখন। এখন ঘুরে ঢুকলে রক্ষা নেই তার। কষের কোণে রক্ত বয়ে পড়ছে।
ওই চিরবশ্য গোমতীই দিতে পারে শান্তি। সদা ওঠে। চলে যায় ধোপাইছড়ি ব্রিজে। ব্রিজের নীচে
জল, গভীর ঘূর্ণি। সদা ঝাঁপায়।